ভারতের বিভিন্ন নদনদীর দৈর্ঘ্য, উৎসস্থল ও পতনস্থল সম্পর্কিত বিবরণ
প্রিয় বন্ধুরা :- আজ তোমাদের ভারতের বিভিন্ন নদনদীর দৈর্ঘ্য, উৎসস্থল ও পতনস্থল সম্পর্কিত বিবরণ শেয়ার করলাম । তাই আর দেরি না করে নিচের বিষয়বস্তু গুলো দেখে নেয়া যাক।
![ভারতের বিভিন্ন নদনদীর দৈর্ঘ্য, উৎসস্থল ও পতনস্থল সম্পর্কিত বিবরণ](https://prashnauttar.in/wp-content/uploads/2024/09/ভারতের-বিভিন্ন-নদনদীর-দৈর্ঘ্য-উৎসস্থল-ও-পতনস্থল-সম্পর্কিত-বিবরণ-1024x576.png)
১. গঙ্গা নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ২,৫২৫ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: গঙ্গোত্রী হিমবাহ (উত্তরাখণ্ডে), যেখানে এটি ভাগীরথী নামে পরিচিত।
- পতনস্থল: বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
- বিশেষত্ব: এটি ভারতের পবিত্রতম নদী হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর অববাহিকায় বহু সভ্যতার বিকাশ হয়েছে।
২. যমুনা নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ১,৩৭৬ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: যমুনোত্রী হিমবাহ, উত্তরাখণ্ড।
- পতনস্থল: এলাহাবাদে (বর্তমানে প্রয়াগরাজ) গঙ্গার সঙ্গে মিশে যায়।
- বিশেষত্ব: যমুনার উপত্যকা খুবই উর্বর এবং ঐতিহাসিক শহর আগ্রা ও দিল্লির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
৩. ব্রহ্মপুত্র নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ২,৯০০ কিলোমিটার (ভারতের মধ্যে ৯১৬ কিলোমিটার)
- উৎসস্থল: তিব্বতের কৈলাশ পর্বতমালার নিকট থেকে, যাকে সেখানে সাংপো বলা হয়।
- পতনস্থল: আসাম ও বাংলাদেশে মেঘনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়ে।
- বিশেষত্ব: এটি ভারতের অন্যতম দীর্ঘতম নদী এবং বর্ষার সময় খুবই বন্যাপ্রবণ।
৪. গোদাবরী নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ১,৪৬৫ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: ত্র্যম্বকেশ্বর, মহারাষ্ট্র।
- পতনস্থল: বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
- বিশেষত্ব: এটি দক্ষিণ ভারতের বৃহত্তম নদী এবং “দক্ষিণের গঙ্গা” নামে পরিচিত।
৫. কৃষ্ণা নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ১,৪০০ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: মহারাষ্ট্রের মহাবালেশ্বর।
- পতনস্থল: বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
- বিশেষত্ব: এটি মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্যে প্রবাহিত হয়।
৬. নর্মদা নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ১,৩১২ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: মধ্যপ্রদেশের অমরকণ্টক থেকে।
- পতনস্থল: আরব সাগরে পতিত হয়।
- বিশেষত্ব: এটি পূর্ব-পশ্চিম প্রবাহিত কয়েকটি নদীর মধ্যে অন্যতম, এবং এর তীরে বহু পবিত্র স্থান অবস্থিত।
৭. কাবেরী নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ৭৬৫ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: কর্ণাটকের কোডাগু জেলার ব্রহ্মগিরি পর্বত।
- পতনস্থল: বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
- বিশেষত্ব: এটি তামিলনাড়ু ও কর্ণাটকের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৮. মহানদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ৮৫৮ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: ছত্তিশগড়ের সিহাওয়া পাহাড়।
- পতনস্থল: বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
- বিশেষত্ব: এটি ওডিশার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী, এবং এর ডেল্টা অঞ্চলে ধান চাষ হয়।
৯. তাপ্তি নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ৭২৪ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: মধ্যপ্রদেশের সাতপুরা রেঞ্জ।
- পতনস্থল: আরব সাগরে পতিত হয়।
- বিশেষত্ব: এটি ভারতের প্রধান পশ্চিমমুখী নদীগুলির মধ্যে একটি।
১০. বিয়াস নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ৪৭০ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: হিমাচল প্রদেশের রোটাং পাস।
- পতনস্থল: পাকিস্তানে সিন্ধু নদীর সঙ্গে মিলিত হয়।
- বিশেষত্ব: এটি পাঞ্জাবের একটি প্রধান নদী, যার আশেপাশে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
১১. সরস্বতী নদী (পৌরাণিক নদী)
- উৎসস্থল: পৌরাণিক মতে হিমালয় থেকে।
- পতনস্থল: সিন্ধু নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে আরব সাগরে পতিত হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।
- বিশেষত্ব: প্রাচীন বৈদিক সাহিত্য অনুসারে, এটি ভারতের সবচেয়ে পবিত্র নদী হিসাবে বিবেচিত। বর্তমানে এটি একটি বিলুপ্ত নদী।
১২. হুগলি নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ২৬০ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: গঙ্গার একটি শাখা নদী।
- পতনস্থল: বঙ্গোপসাগরে পড়ে।
- বিশেষত্ব: কলকাতা শহরের প্রাণশক্তি এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর।
১৩. শতদ্রু (সতলুজ) নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ১,৪৫০ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: তিব্বতের মানসসরোবর লেকের নিকট থেকে।
- পতনস্থল: পাকিস্তানে সিন্ধু নদীর সঙ্গে মিলিত হয়।
- বিশেষত্ব: এটি পাঞ্জাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী এবং ইন্দো-পাকিস্তান পানি চুক্তির অধীনে ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১৪. চেনাব নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ১,২৪০ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: হিমাচল প্রদেশের বারালাচা পাস থেকে।
- পতনস্থল: পাকিস্তানে সিন্ধু নদীর সঙ্গে মিশে যায়।
- বিশেষত্ব: এটি পাঞ্জাব অঞ্চলে প্রচুর কৃষি জমিতে সেচের কাজ করে।
১৫. ঘাঘর নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ৪৬০ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: নেপালের শিবালিক পর্বতমালা থেকে।
- পতনস্থল: গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়।
- বিশেষত্ব: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমি নদী এবং প্রাচীনকালে সরস্বতী নদীর শাখা হিসেবে ধরা হয়।
১৬. সরযূ নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ৫০৭ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: উত্তরাখণ্ডের শিবালিক পর্বতমালা।
- পতনস্থল: গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়।
- বিশেষত্ব: এটি ভারতের প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থ রামায়ণের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং অযোধ্যা শহরটি এর তীরে অবস্থিত।
১৭. গান্ধক নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ৬৩২ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: নেপালের হিমালয় থেকে।
- পতনস্থল: গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়।
- বিশেষত্ব: এটি নেপাল ও ভারতের মধ্যে একটি প্রধান নদী, যা উত্তর বিহারের কৃষি এলাকায় পানি সরবরাহ করে।
১৮. সুবর্ণরেখা নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ৪৭৬ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: ঝাড়খণ্ডের রাঁচি অঞ্চলের পহাড়ি এলাকা থেকে।
- পতনস্থল: বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
- বিশেষত্ব: এটি ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং মূলত খনিজ অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যায়।
১৯. বেতুয়া নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ৫৭৫ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: মধ্যপ্রদেশের বিদিশা জেলা।
- পতনস্থল: যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়।
- বিশেষত্ব: এটি বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী, যা কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়।
২০. তুঙ্গভদ্রা নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ৫৩০ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: কর্ণাটকের পশ্চিমঘাট থেকে।
- পতনস্থল: কৃষ্ণা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়।
- বিশেষত্ব: তুঙ্গভদ্রা বাঁধ কৃষিক্ষেত্রে ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এটি দক্ষিণ ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২১. ধনসু নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ৭৩০ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: ছত্তিশগড়ের বস্তার জেলা।
- পতনস্থল: গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়।
- বিশেষত্ব: এটি ছত্তিশগড় ও ওডিশার মধ্যে প্রবাহিত হয় এবং খনিজ ও বনজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল।
২২. পেঙ্গাঙ্গা নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ৬৭৫ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: মহারাষ্ট্রের যবতমাল জেলা।
- পতনস্থল: গোদাবরী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়।
- বিশেষত্ব: এটি মহারাষ্ট্র ও তেলেঙ্গানার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
২৩. মনসা নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ৭২৭ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং অঞ্চলে।
- পতনস্থল: ব্রহ্মপুত্র নদীর সঙ্গে মিশে যায়।
- বিশেষত্ব: এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী।
২৪. পেন্নার নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ৫৯৭ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: কর্ণাটকের নন্দী পাহাড় থেকে।
- পতনস্থল: বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
- বিশেষত্ব: এটি অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটকের মধ্যে প্রধান নদী হিসেবে কাজ করে এবং কৃষিক্ষেত্রে পানির উৎস।
২৫. জহিলম নদী
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ৭২৫ কিলোমিটার
- উৎসস্থল: জম্মু ও কাশ্মীরের ভেরিনাগ থেকে।
- পতনস্থল: পাকিস্তানে সিন্ধু নদীর সঙ্গে মিশে যায়।
- বিশেষত্ব: এটি কাশ্মীর উপত্যকার প্রধান নদী এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
Facebook
WhatsApp
Telegram