পশ্চিমবঙ্গের ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য || Geological diversity of West Bengal

পশ্চিমবঙ্গের ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য || Geological diversity of West Bengal

 প্রিয় বন্ধুরা:- আজকে পশ্চিমবঙ্গের ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর দেওয়া হলো। আশা করি এই প্রশ্ন-উত্তর গুলি তোমাদের পশ্চিমবঙ্গের ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করবে

Table of Contents

পশ্চিমবঙ্গের ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য

ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও ভূমির গঠন অনুসারে পশ্চিমবঙ্গকে তিনটি প্রাকৃতিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়। যথা-

  • উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল
  • পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল
  • সমভূমি অঞ্চল

উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল:-

পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলটি ভারতের অন্যতম সুন্দর ও পর্যটনসমৃদ্ধ এলাকা। এই অঞ্চলটি হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এবং এখানকার প্রধান শহরগুলো হলো দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং প্রভৃতি।

প্রধান বৈশিষ্ট্য:
  • দার্জিলিং: চা বাগানের জন্য বিখ্যাত। দার্জিলিং চা সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধ। এখানে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (টয় ট্রেন) অন্যতম আকর্ষণ।

  • কালিম্পং: এখানকার অর্কিড, নার্সারি, এবং তিব্বতি হস্তশিল্পের জন্য পরিচিত। কালিম্পং-এর মনাস্ট্রিগুলোও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

  • কার্শিয়াং: এখানকার চা বাগান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মন কাড়ে। শান্ত পরিবেশ এবং এখানকার আবহাওয়া অনেককে আকৃষ্ট করে।

আকর্ষণীয় স্থানসমূহ:
  • টাইগার হিল: দার্জিলিংয়ের কাছাকাছি অবস্থিত, এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং মাউন্ট এভারেস্টের দৃশ্য দেখা যায়।
  • বাতাসিয়া লুপ: দার্জিলিংয়ের একটি বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান যেখানে টয় ট্রেন একটি সুন্দর লুপ তৈরি করে।
  • পেদং: কালিম্পং এর কাছে অবস্থিত একটি ছোট্ট শহর যা তার মনোরম পরিবেশ ও দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।

এই অঞ্চলটি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, বরং এখানকার সংস্কৃতি, খাবার এবং স্থানীয় মানুষদের আতিথেয়তার জন্যও বিখ্যাত।

পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল

পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম অংশে অবস্থিত মালভূমি অঞ্চলটি বেশিরভাগই ছোটা নাগপুর মালভূমির অন্তর্গত এবং এটি একটি পাথুরে ও উঁচু ভূমি যা খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এই অঞ্চলের প্রধান জেলাগুলি হলো পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর।

প্রধান বৈশিষ্ট্য:
  • ভূমির গঠন: এই অঞ্চলটি প্রধানত পাথুরে ও উঁচু, যেখানে ছোট ছোট পাহাড় ও টিলা রয়েছে। এটি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ, যেমন লৌহ আকরিক, ম্যাঙ্গানিজ, এবং কয়লা।

  • বনাঞ্চল: এখানে প্রচুর বনাঞ্চল রয়েছে, যা বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আশ্রয়স্থল। এই বনাঞ্চলগুলো সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান ও অন্যান্য সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অংশ।

  • নদী: কংসাবতী, দামোদর, এবং শিলাবতী এই অঞ্চলের প্রধান নদী। এই নদীগুলো কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধান শহর ও স্থানসমূহ:
  • পুরুলিয়া: পুরুলিয়া তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাথুরে পাহাড়, এবং আদিবাসী সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। এখানে অযোধ্যা পাহাড় অন্যতম আকর্ষণ।

  • বাঁকুড়া: বাঁকুড়া তার মন্দির ও টেরাকোটা শিল্পের জন্য বিখ্যাত। বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলি এখানকার প্রধান আকর্ষণ।

  • পশ্চিম মেদিনীপুর: খড়গপুর ও ঝাড়গ্রাম এখানকার দুটি প্রধান শহর। ঝাড়গ্রাম তার রাজবাড়ি ও বনাঞ্চলের জন্য পরিচিত।

আকর্ষণীয় স্থানসমূহ:
  • অযোধ্যা পাহাড়: পুরুলিয়ার অন্যতম দর্শনীয় স্থান, যা পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয়।
  • বিষ্ণুপুর: বাঁকুড়ার এই শহর তার টেরাকোটা মন্দির ও প্রাচীন স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত।
  • খড়গপুর: খড়গপুর ভারতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান (IIT) এর জন্য বিখ্যাত এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন।

এই মালভূমি অঞ্চলটি পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এলাকা, যেখানে আদিবাসী সংস্কৃতি, ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলি পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

সমভূমি অঞ্চল

পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলটি রাজ্যের মধ্য ও দক্ষিণ অংশ জুড়ে বিস্তৃত এবং এটি গঙ্গা নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলের মাটি উর্বর এবং কৃষিকাজের জন্য খুবই উপযোগী। প্রধানত হুগলি, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাগুলি এই অঞ্চলে অবস্থিত।

প্রধান বৈশিষ্ট্য:
  • ভূমির গঠন: সমভূমি অঞ্চলের ভূমি বেশিরভাগই সমতল এবং উর্বর। এই অঞ্চলে কৃষি অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক কার্যকলাপ। ধান, পাট, গম, এবং অন্যান্য শস্য এখানে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়।

  • নদী: গঙ্গা, হুগলি, দামোদর, রূপনারায়ণ, এবং ময়ূরাক্ষী এই অঞ্চলের প্রধান নদী। এসব নদী কৃষিকাজের জন্য জল সরবরাহ করে এবং কিছু নদী পরিবহন মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

  • ব-দ্বীপ অঞ্চল: গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চল দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং সুন্দরবন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। সুন্দরবন বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য বিখ্যাত এবং এটি UNESCO ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত।

প্রধান শহর ও স্থানসমূহ:
  • কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী এবং ভারতের অন্যতম বৃহৎ শহর। এটি বাণিজ্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

  • হাওড়া: কলকাতার পাশের শহর, যা হাওড়া ব্রিজ এবং হাওড়া স্টেশনের জন্য বিখ্যাত।

  • বর্ধমান: এটি কৃষিকাজ ও শিল্পের জন্য পরিচিত। এখানে বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য রয়েছে।

  • মালদা: মালদা তার আম এবং পাটের জন্য বিখ্যাত। এখানকার ঐতিহাসিক গৌড় শহরটি পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

আকর্ষণীয় স্থানসমূহ:
  • সুন্দরবন: বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল। এখানে নৌকা ভ্রমণ এবং বন্যপ্রাণী দেখা অন্যতম আকর্ষণ।

  • মুর্শিদাবাদ: এই শহরটি তার ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপত্যের জন্য পরিচিত, যেমন হাজারদুয়ারি প্রাসাদ এবং কাঠগোলা বাগানবাড়ি।

  • দক্ষিণেশ্বর ও বেলুড় মঠ: হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত দুটি বিখ্যাত তীর্থস্থান, যা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

এই সমভূমি অঞ্চলটি পশ্চিমবঙ্গের জনবহুল ও কৃষিভিত্তিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত, যেখানে ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমাহার ঘটেছে।

পশ্চিমবঙ্গের ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও তাদের উত্তর:

প্রশ্ন ১: পশ্চিমবঙ্গের প্রধান ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলগুলো কী কী?

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের প্রধান ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলগুলো হলো:

  1. উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল (দার্জিলিং হিমালয়)
  2. পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল (ছোটা নাগপুর মালভূমি)
  3. মধ্য ও দক্ষিণের সমভূমি অঞ্চল (গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ব-দ্বীপ)
  4. দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চল (সুন্দরবন)
প্রশ্ন ২: দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি কেমন?

উত্তর: দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলটি হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত। এখানে পাহাড়, টিলা, এবং চা বাগানগুলি দেখতে পাওয়া যায়। অঞ্চলটি তার শীতল আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।

প্রশ্ন ৩: ছোটা নাগপুর মালভূমি কী এবং এটি পশ্চিমবঙ্গে কোথায় অবস্থিত?

উত্তর: ছোটা নাগপুর মালভূমি একটি পাথুরে এবং উঁচু ভূমি, যা খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, এবং পশ্চিম মেদিনীপুর এই মালভূমি অঞ্চলের অংশ।

প্রশ্ন ৪: সুন্দরবন কী এবং এর বিশেষত্ব কী?

উত্তর: সুন্দরবন হলো বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল। এটি গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত এবং UNESCO ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত।

প্রশ্ন ৫: পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলের প্রধান কৃষি পণ্য কী কী?

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলে প্রধানত ধান, পাট, গম, ও আলু চাষ করা হয়। এছাড়া শাকসবজি ও তেলের বীজেরও চাষ হয়।

প্রশ্ন ৬: পশ্চিমবঙ্গের কোন অঞ্চলটি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ?

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল, বিশেষ করে পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া, খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এখান থেকে লৌহ আকরিক, ম্যাঙ্গানিজ, এবং কয়লা পাওয়া যায়।

প্রশ্ন ৭: পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলের মূল বৈশিষ্ট্য কী?

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলটি সুন্দরবন ও সমুদ্র উপকূল নিয়ে গঠিত। এটি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, নদীবিধৌত অঞ্চল, এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতল হরিণ, এবং কুমিরসহ নানা বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।

প্রশ্ন ৮: দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে কোন ফসল বেশি চাষ করা হয়?

উত্তর: দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে মূলত চা চাষ করা হয়, যা “দার্জিলিং চা” নামে বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত।

এই প্রশ্নোত্তরগুলি পশ্চিমবঙ্গের ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়।

Facebook
WhatsApp
Telegram

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Scroll to Top