15ই আগস্টের ইতিহাস ভারতের স্বাধীনতা দিবস
স্বাধীনতা দিবস হল ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একটি জাতীয় দিবস। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট (১৩৫৪ বঙ্গাব্দের ২৯ শ্রাবণ, শুক্রবার) ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসনকর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল।
![15ই আগস্টের ইতিহাস](https://prashnauttar.in/wp-content/uploads/2024/08/15-august-1024x576.png)
ভূমিকা:
15ই আগস্ট, 1947, ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে স্মরণীয় দিনগুলির মধ্যে একটি। এই দিনটি শুধু ভারতীয়দের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। শতাব্দীর ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে এই দিনে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহসিকতা, আত্মত্যাগ ও আত্মত্যাগের ফসল হিসেবেই অর্জিত হয়েছে এই স্বাধীনতা দিবস। এই বইটি সেই গৌরবময় দিনটির পিছনের ইতিহাস, সংগ্রাম এবং উত্তরাধিকার সম্পর্কে বিশদ আলোচনা সরবরাহ করবে।
প্রথম অধ্যায়: ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনা ও সম্প্রসারণ
ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাস শুরু হয় 1757 সালে পলাশীর যুদ্ধের পর, যখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা, বিহার এবং উড়িষ্যার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নেয়। ধীরে ধীরে ব্রিটিশরা তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে এবং ভারতের বিভিন্ন স্থানে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে।
ব্রিটিশরা মূলত ভারতীয় সম্পদ শোষণ এবং জনগণের উপর করের বোঝা বাড়িয়ে তাদের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করেছিল। ব্রিটিশ শাসনের নীতি ছিল “ডিভাইড এন্ড রুল” যার ফলে ভারতের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্য বিনষ্ট হয়। এছাড়া ব্রিটিশরা ভারতীয় শিল্প ও বাণিজ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে ভারতীয় অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়।
দ্বিতীয় অধ্যায়: স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা
1857 সালের মহান বিদ্রোহ, যা প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম নামে পরিচিত, এটি ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম বড় বিদ্রোহ। যদিও এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়, তবে এটি ভারতীয় জনগণের মধ্যে স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদার আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করে। এই বিদ্রোহের পর স্বাধীনতার দাবিতে বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট বিদ্রোহ, আন্দোলন ও সংগঠন গড়ে উঠতে থাকে।
এই সময়কালে, দাদাভাই নওরোজি, বাল গঙ্গাধর তিলক এবং গোপাল কৃষ্ণ গোখলের মতো নেতারা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদ জাগ্রত করেছিলেন। 1885 সালে, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গঠিত হয়, যা ভারতীয় স্বাধীনতা ও ভোটাধিকারের আন্দোলনকে সংগঠিত করে।
তৃতীয় অধ্যায়: গান্ধীজির নেতৃত্ব এবং অহিংস আন্দোলন
মহাত্মা গান্ধী 1915 সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে ফিরে আসেন এবং শীঘ্রই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা হয়ে ওঠেন। তার নেতৃত্বে আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। গান্ধীজী অহিংসা ও সত্যাগ্রহের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন। 1919 সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পর, গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছিলেন, যা ব্রিটিশদের সমর্থনকারী সমস্ত কিছু বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছিল।
1930 সালে, গান্ধীজি লবণ সত্যাগ্রহ বা ডান্ডি মার্চের নেতৃত্ব দেন, যা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ প্রকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। গান্ধীজি এবং তার সহকর্মীরা ব্রিটিশ আইনকে অমান্য করে সমুদ্র থেকে লবণ সংগ্রহ করেছিলেন, যা ব্রিটিশ সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও, 1942 সালে, গান্ধীজি “ভারত ছাড়ো আন্দোলন” শুরু করেছিলেন, যা স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ অধ্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
চতুর্থ অধ্যায়: স্বাধীনতা অর্জনের জন্য রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা
স্বাধীনতার দাবিতে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা 1940-এর দশকে তীব্রতর হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারে ভারত শাসন করা আর সম্ভব নয়। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে মতভেদ এবং মুসলিম লীগের পৃথক রাষ্ট্রের দাবি ব্রিটিশ সরকারের ওপর চাপ বাড়ায়।
1946 সালে, ব্রিটিশ সরকার ভারতকে স্বাধীনতা প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করে এবং 3 জুন 1947 তারিখে মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়, যাতে ভারত ও পাকিস্তানকে দুটি পৃথক রাষ্ট্র হিসাবে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অবশেষে, 14-15 আগস্ট 1947-এর মধ্যরাতে, ভারত স্বাধীনতা লাভ করে এবং লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন এবং ঐতিহাসিক “Tryst with Destiny” ভাষণ দেন।
পঞ্চম অধ্যায়: 15ই আগস্ট 1947—সেই ঐতিহাসিক দিন
15 আগস্ট, 1947 ভারত জুড়ে অভূতপূর্ব আনন্দের দিন ছিল। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু দিল্লির লাল কেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন, যা আজও ভারতের স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে স্মরণ করা হয়। এই দিনটি শুধু রাজধানী দিল্লিতেই নয়, সারা দেশে পালিত হয়েছে। রাস্তায়, গ্রামে, শহরে মানুষ মুক্তির আনন্দে মেতে ওঠে।
ওই দিন ভারতকে দুটি স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়- ভারত ও পাকিস্তান। দেশভাগের কারণে অনেক দুঃখজনক ঘটনা ঘটলেও মানুষের মনে স্বাধীনতার আনন্দ উজ্জ্বল ছিল।
ষষ্ঠ অধ্যায়: স্বাধীনতার উত্তরাধিকার
ভারতের স্বাধীনতার পর দেশটি অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন, রাষ্ট্র গঠন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ছিল ভারতের নেতাদের প্রধান দায়িত্ব। 1950 সালে, ভারতের সংবিধান কার্যকর হয় এবং ভারত একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।
স্বাধীনতার আদর্শ এবং সংগ্রামের উত্তরাধিকার ভারতের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সেই উত্তরাধিকার বহন করে।
সপ্তম অধ্যায়: আজকের ভারত এবং স্বাধীনতার আত্মা
আজকের ভারত একটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ, যা অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। কিন্তু স্বাধীনতার আদর্শ ও চেতনা এখনও ভারতের মানুষের মধ্যে বেঁচে আছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারত এখনও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে এবং সেই চেতনাকে সামনে রেখে এগিয়ে চলেছে।
15ই আগস্ট এখনও ভারতের মানুষের জন্য একটি প্রেরণাদায়ক দিন। দিবসটি জাতীয় ঐক্য, আত্মমর্যাদা ও উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে পালিত হয়। স্বাধীনতার চেতনা বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে আরও উদ্দীপনা ও দেশপ্রেমের বোধ জাগিয়েছে।
উপসংহার
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এবং 15ই আগস্ট কেবল একটি দিনের ঘটনা নয়, একটি জাতির আত্মনির্ভরতা, ত্যাগ এবং সংগ্রামের প্রতীক। এই ইতিহাস ভারতের প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত করে। এই ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি মূল্যবান পাঠ, যা তাদের মধ্যে দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ ও জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করবে।
1757: পলাশীর যুদ্ধ
1857: প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম
1919: জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড
1942: ভারত ছাড়ো আন্দোলন
1947: ভারত স্বাধীনতা লাভ করে
এই বইটি ভারতীয় স্বাধীনতার সম্পূর্ণ ইতিহাস উপস্থাপন করবে এবং এই মহান জাতির ত্যাগ, সংগ্রাম এবং অর্জনের গল্প বলবে। এটি একটি ধ্রুবক উত্স হিসাবে কাজ করবে, যা ভবিষ্যত প্রজন্মকে স্বাধীনতার মূল্য এবং এর চেতনাকে সম্মান করবে।