সম্পূর্ণ বিবরণ সহ বিভিন্ন প্রাণীর শ্বাস অঙ্গের নামের তালিকা

সম্পূর্ণ বিবরণ সহ বিভিন্ন প্রাণীর শ্বাস অঙ্গের নামের তালিকা

প্রিয় বন্ধুরা :- প্রাণিজগতের প্রতিটি প্রজাতি তাদের নিজস্ব পরিবেশ ও জীবনধারার সাথে খাপ খাইয়ে শ্বাস নেয়ার জন্য ভিন্ন ধরনের শ্বাস অঙ্গ ব্যবহার করে। কেউ ফুসফুসের মাধ্যমে শ্বাস নেয়, কেউ বা গিলের সাহায্যে। আবার কিছু প্রাণী সরাসরি তাদের ত্বক বা অন্যান্য বিশেষ অঙ্গের মাধ্যমে শ্বাস গ্রহণ করে। প্রাণীদের শ্বাস-প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে হলে তাদের শ্বাস অঙ্গ এবং এর কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত।

 নিচে সম্পূর্ণ বিবরণ সহ বিভিন্ন প্রাণীর শ্বাস অঙ্গের নামের তালিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

সম্পূর্ণ বিবরণ সহ বিভিন্ন প্রাণীর শ্বাস অঙ্গের নামের তালিকা

বিভিন্ন প্রাণীর শ্বাস অঙ্গের তালিকা এবং তাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দেওয়া হলো:

১. মানুষ (Humans)

  • শ্বাস অঙ্গ: ফুসফুস (Lungs)
  • বিবরণ: মানুষের ফুসফুস প্রধান শ্বাস অঙ্গ, যা বায়ু থেকে অক্সিজেন শোষণ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দেয়। শ্বাসনালী (Trachea) ফুসফুসে বায়ু সরবরাহ করে।

২. মাছ (Fish)

  • শ্বাস অঙ্গ: গিল (Gills)
  • বিবরণ: মাছেরা গিলের মাধ্যমে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করে। গিলের ফিলামেন্টগুলো পানির সাথে সংস্পর্শে এসে অক্সিজেন শোষণ করে এবং বর্জ্য কার্বন ডাই অক্সাইডকে বের করে দেয়।

৩. ব্যাঙ (Frogs)

  • শ্বাস অঙ্গ: ফুসফুস ও ত্বক (Lungs and Skin)
  • বিবরণ: ব্যাঙের শ্বাস অঙ্গ দুটি ধরণের: জলজ পর্যায়ে (শূককীট) গিলের মাধ্যমে শ্বাস নেয় এবং স্থলজ অবস্থায় (প্রাপ্তবয়স্ক ব্যাঙ) ফুসফুস ও ত্বকের মাধ্যমে শ্বাস গ্রহণ করে। ত্বকের মাধ্যমেও তারা শ্বাস নিতে পারে।

৪. কচ্ছপ (Turtles)

  • শ্বাস অঙ্গ: ফুসফুস (Lungs)
  • বিবরণ: কচ্ছপেরা ফুসফুসের মাধ্যমে শ্বাস নেয়, তবে অনেক প্রজাতি পানির নিচে দীর্ঘক্ষণ থাকতে পারে কারণ তাদের শরীর অক্সিজেন সঞ্চয় করতে সক্ষম।

৫. পোকা-মাকড় (Insects)

  • শ্বাস অঙ্গ: ট্রাকিয়া (Tracheae)
  • বিবরণ: পোকা-মাকড়দের ট্রাকিয়াল সিস্টেমের মাধ্যমে সরাসরি শরীরের টিস্যুতে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। বায়ু ছোট ছোট ছিদ্র (স্পাইরাকল) দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে এবং ট্রাকিয়াল টিউবের মাধ্যমে বণ্টিত হয়।

৬. মাকড়সা (Spiders)

  • শ্বাস অঙ্গ: বুকের পাতা (Book Lungs)
  • বিবরণ: মাকড়সাদের বুকের পাতার নামক একটি বিশেষ শ্বাস অঙ্গ রয়েছে যা পাতার মতো গঠনবিশিষ্ট। এই অঙ্গ অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে।

৭. কৃমি (Earthworms)

  • শ্বাস অঙ্গ: ত্বক (Skin)
  • বিবরণ: কৃমিরা তাদের ত্বকের মাধ্যমে শ্বাস নেয়। ত্বকের পৃষ্ঠটি স্যাঁতসেঁতে থাকতে হয় যাতে অক্সিজেন ছিদ্রগুলো দিয়ে তাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

৮. সরীসৃপ (Reptiles)

  • শ্বাস অঙ্গ: ফুসফুস (Lungs)
  • বিবরণ: সরীসৃপদের ফুসফুস প্রধান শ্বাস অঙ্গ। তবে সাপের ফুসফুসের একটি অংশ বিকাশহীন বা ছোট থাকে, যাতে তারা তাদের সরু শরীরে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে পারে।

৯. পাখি (Birds)

  • শ্বাস অঙ্গ: ফুসফুস ও বায়ু থলি (Lungs and Air Sacs)
  • বিবরণ: পাখিরা ফুসফুসের পাশাপাশি বায়ু থলি ব্যবহার করে। এই থলিগুলো শরীরের বিভিন্ন স্থানে থাকে এবং ফুসফুসকে সহায়তা করে, যা দীর্ঘস্থায়ী ও কার্যকর শ্বাসপ্রশ্বাস নিশ্চিত করে।

১০. ডলফিন ও তিমি (Dolphins and Whales)

  • শ্বাস অঙ্গ: ফুসফুস (Lungs)
  • বিবরণ: ডলফিন ও তিমিরা স্তন্যপায়ী প্রাণী, তাই তারা ফুসফুসের মাধ্যমে শ্বাস নেয়। তারা পানির ওপরে উঠে এসে শ্বাস নেয় এবং একটি শ্বাসরন্ধ্রের মাধ্যমে শ্বাসপ্রশ্বাস চালায়।

নিচে আরো কিছু প্রাণীর শ্বাস অঙ্গ এবং তাদের বিবরণ দেওয়া হলো:

১১. অক্টোপাস (Octopus)

  • শ্বাস অঙ্গ: গিল (Gills)
  • বিবরণ: অক্টোপাসদের গিলের মাধ্যমে শ্বাস নিতে হয়। গিলগুলো অক্টোপাসের ম্যান্টল বা দেহের একটি অংশে থাকে, যেখানে পানির প্রবাহের মাধ্যমে অক্সিজেন শোষণ করা হয়।

১২. কাঁকড়া (Crabs)

  • শ্বাস অঙ্গ: গিল (Gills)
  • বিবরণ: কাঁকড়ারা তাদের গিলের মাধ্যমে শ্বাস নেয়, যা সাধারণত তাদের দেহের পাশে সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে। স্থলজ কাঁকড়ারা ভিজা স্থানে থাকতে পছন্দ করে যাতে তাদের গিলের শ্বাসগ্রহণের ক্ষমতা বজায় থাকে।

১৩. কুমির (Crocodiles)

  • শ্বাস অঙ্গ: ফুসফুস (Lungs)
  • বিবরণ: কুমিরেরা ফুসফুসের মাধ্যমে শ্বাস নেয় এবং তারা দীর্ঘ সময় ধরে পানির নিচে থাকতে পারে। শিকার করার সময় তারা শ্বাসরোধ করে অপেক্ষা করতে পারে।

১৪. জেলিফিশ (Jellyfish)

  • শ্বাস অঙ্গ: ডিফিউশন (Diffusion through Body Surface)
  • বিবরণ: জেলিফিশের কোন নির্দিষ্ট শ্বাস অঙ্গ নেই। তাদের দেহের পৃষ্ঠের মাধ্যমে অক্সিজেন সরাসরি ছড়িয়ে যায় (ডিফিউশন প্রক্রিয়া), যেহেতু তারা পানিতে ভেসে বেড়ায়।

১৫. হাতি (Elephant)

  • শ্বাস অঙ্গ: ফুসফুস (Lungs)
  • বিবরণ: হাতিরা তাদের ফুসফুসের মাধ্যমে শ্বাস নেয়। হাতির শুঁড়ের সাহায্যে তারা বায়ু নাকের মধ্য দিয়ে শ্বাস নেয় এবং খাবার বা পানিও সংগ্রহ করতে পারে।

১৬. বাদুড় (Bats)

  • শ্বাস অঙ্গ: ফুসফুস (Lungs)
  • বিবরণ: বাদুড়দের ফুসফুস উন্নত এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত। উড়ন্ত অবস্থায় তারা দ্রুত অক্সিজেন শোষণ করতে সক্ষম হয়, কারণ তাদের উচ্চ গতির জন্য প্রচুর শক্তি প্রয়োজন।

১৭. কুইনচা (Starfish)

  • শ্বাস অঙ্গ: প্যাপুলা (Papulae) এবং টিউব ফুট (Tube Feet)
  • বিবরণ: স্টারফিশের বিশেষ শ্বাস অঙ্গ হল প্যাপুলা এবং টিউব ফুট। এগুলোর মাধ্যমে তারা পরিবেশ থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে। ত্বকের মাধ্যমে শ্বাস নিতে সক্ষম হলেও, তাদের টিউব ফুটগুলোও শ্বাসক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।

১৮. কাকড়া মাছ (Horseshoe Crab)

  • শ্বাস অঙ্গ: বুকের পাতা (Book Gills)
  • বিবরণ: এই প্রাণীর বুকের পাতা নামক গিলের অনুরূপ একটি অঙ্গ আছে, যা পানির মধ্যে অক্সিজেন শোষণ করতে সাহায্য করে। বুকের পাতাগুলো স্তরবিন্যাসযুক্ত, যা এদের অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য।

১৯. অ্যালিগেটর (Alligator)

  • শ্বাস অঙ্গ: ফুসফুস (Lungs)
  • বিবরণ: অ্যালিগেটররা ফুসফুসের মাধ্যমে শ্বাস নেয়। তারা পানির নিচে থাকতে পারলেও, শিকার করার সময় তাদের নাক ও মুখ বন্ধ রাখে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস রোধ করে অপেক্ষা করতে পারে।

২০. সামুদ্রিক কচ্ছপ (Sea Turtles)

  • শ্বাস অঙ্গ: ফুসফুস (Lungs)
  • বিবরণ: সামুদ্রিক কচ্ছপদের ফুসফুসের মাধ্যমে শ্বাস নিতে হয়, কিন্তু তারা পানির নিচে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত থাকতে সক্ষম। শিকার করা বা সাঁতার কাটার সময় তাদের ফুসফুসে সংগৃহীত অক্সিজেন কাজে লাগে।

২১. স্কুইড (Squid)

  • শ্বাস অঙ্গ: গিল (Gills)
  • বিবরণ: স্কুইডরা তাদের ম্যান্টল কেভিটিতে থাকা গিলের মাধ্যমে শ্বাস নেয়। পানির প্রবাহের মাধ্যমে অক্সিজেন শোষণ করা হয়, এবং স্কুইড দ্রুত সাঁতার কাটার সময় এই শ্বাসক্রিয়া খুব কার্যকর হয়।

২২. চিংড়ি (Shrimp)

  • শ্বাস অঙ্গ: গিল (Gills)
  • বিবরণ: চিংড়ির গিলের মাধ্যমে শ্বাস নিতে হয়। তাদের গিলগুলো দেহের নিচে এবং আবরণে সুরক্ষিত থাকে, যা অক্সিজেন শোষণ করে।

২৩. কুমির (Snails)

  • শ্বাস অঙ্গ: গিল বা ফুসফুস (Gills or Lungs)
  • বিবরণ: বিভিন্ন প্রজাতির কুমিরের শ্বাস অঙ্গ ভিন্ন হয়। জলজ কুমির গিলের মাধ্যমে শ্বাস নেয়, এবং স্থলজ কুমিরদের ফুসফুস থাকে, যা তাদের শুষ্ক পরিবেশে শ্বাস নিতে সাহায্য করে।

২৪. সাপ (Snakes)

  • শ্বাস অঙ্গ: ফুসফুস (Lungs)
  • বিবরণ: সাপদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ফুসফুস থাকে। তবে তাদের ডান দিকের ফুসফুস দীর্ঘ ও কার্যকর, যেখানে বাম দিকের ফুসফুস প্রায় অকার্যকর বা ছোট থাকে।

এই প্রাণীগুলোর শ্বাস অঙ্গ তাদের পরিবেশ ও জীবনধারার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিকশিত হয়েছে। যা তাদের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় প্রদান করে।

Facebook
WhatsApp
Telegram

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Scroll to Top