ভারতের বিভিন্ন নদনদীর দৈর্ঘ্য, উৎসস্থল ও পতনস্থল সম্পর্কিত বিবরণ

ভারতের বিভিন্ন নদনদীর দৈর্ঘ্য, উৎসস্থল ও পতনস্থল সম্পর্কিত বিবরণ

প্রিয় বন্ধুরা :- আজ তোমাদের ভারতের বিভিন্ন নদনদীর দৈর্ঘ্য, উৎসস্থল ও পতনস্থল সম্পর্কিত বিবরণ শেয়ার করলাম । তাই আর দেরি না করে নিচের বিষয়বস্তু গুলো দেখে নেয়া যাক।

ভারতের বিভিন্ন নদনদীর দৈর্ঘ্য, উৎসস্থল ও পতনস্থল সম্পর্কিত বিবরণ

১. গঙ্গা নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ২,৫২৫ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: গঙ্গোত্রী হিমবাহ (উত্তরাখণ্ডে), যেখানে এটি ভাগীরথী নামে পরিচিত।
  • পতনস্থল: বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
  • বিশেষত্ব: এটি ভারতের পবিত্রতম নদী হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর অববাহিকায় বহু সভ্যতার বিকাশ হয়েছে।

২. যমুনা নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ১,৩৭৬ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: যমুনোত্রী হিমবাহ, উত্তরাখণ্ড।
  • পতনস্থল: এলাহাবাদে (বর্তমানে প্রয়াগরাজ) গঙ্গার সঙ্গে মিশে যায়।
  • বিশেষত্ব: যমুনার উপত্যকা খুবই উর্বর এবং ঐতিহাসিক শহর আগ্রা ও দিল্লির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

৩. ব্রহ্মপুত্র নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ২,৯০০ কিলোমিটার (ভারতের মধ্যে ৯১৬ কিলোমিটার)
  • উৎসস্থল: তিব্বতের কৈলাশ পর্বতমালার নিকট থেকে, যাকে সেখানে সাংপো বলা হয়।
  • পতনস্থল: আসাম ও বাংলাদেশে মেঘনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়ে।
  • বিশেষত্ব: এটি ভারতের অন্যতম দীর্ঘতম নদী এবং বর্ষার সময় খুবই বন্যাপ্রবণ।

৪. গোদাবরী নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ১,৪৬৫ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: ত্র্যম্বকেশ্বর, মহারাষ্ট্র।
  • পতনস্থল: বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
  • বিশেষত্ব: এটি দক্ষিণ ভারতের বৃহত্তম নদী এবং “দক্ষিণের গঙ্গা” নামে পরিচিত।

৫. কৃষ্ণা নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ১,৪০০ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: মহারাষ্ট্রের মহাবালেশ্বর।
  • পতনস্থল: বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
  • বিশেষত্ব: এটি মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্যে প্রবাহিত হয়।

৬. নর্মদা নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ১,৩১২ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: মধ্যপ্রদেশের অমরকণ্টক থেকে।
  • পতনস্থল: আরব সাগরে পতিত হয়।
  • বিশেষত্ব: এটি পূর্ব-পশ্চিম প্রবাহিত কয়েকটি নদীর মধ্যে অন্যতম, এবং এর তীরে বহু পবিত্র স্থান অবস্থিত।

৭. কাবেরী নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ৭৬৫ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: কর্ণাটকের কোডাগু জেলার ব্রহ্মগিরি পর্বত।
  • পতনস্থল: বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
  • বিশেষত্ব: এটি তামিলনাড়ু ও কর্ণাটকের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৮. মহানদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ৮৫৮ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: ছত্তিশগড়ের সিহাওয়া পাহাড়।
  • পতনস্থল: বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
  • বিশেষত্ব: এটি ওডিশার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী, এবং এর ডেল্টা অঞ্চলে ধান চাষ হয়।

৯. তাপ্তি নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ৭২৪ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: মধ্যপ্রদেশের সাতপুরা রেঞ্জ।
  • পতনস্থল: আরব সাগরে পতিত হয়।
  • বিশেষত্ব: এটি ভারতের প্রধান পশ্চিমমুখী নদীগুলির মধ্যে একটি।

১০. বিয়াস নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ৪৭০ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: হিমাচল প্রদেশের রোটাং পাস।
  • পতনস্থল: পাকিস্তানে সিন্ধু নদীর সঙ্গে মিলিত হয়।
  • বিশেষত্ব: এটি পাঞ্জাবের একটি প্রধান নদী, যার আশেপাশে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

১১. সরস্বতী নদী (পৌরাণিক নদী)

  • উৎসস্থল: পৌরাণিক মতে হিমালয় থেকে।
  • পতনস্থল: সিন্ধু নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে আরব সাগরে পতিত হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।
  • বিশেষত্ব: প্রাচীন বৈদিক সাহিত্য অনুসারে, এটি ভারতের সবচেয়ে পবিত্র নদী হিসাবে বিবেচিত। বর্তমানে এটি একটি বিলুপ্ত নদী।

১২. হুগলি নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ২৬০ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: গঙ্গার একটি শাখা নদী।
  • পতনস্থল: বঙ্গোপসাগরে পড়ে।
  • বিশেষত্ব: কলকাতা শহরের প্রাণশক্তি এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর।

১৩. শতদ্রু (সতলুজ) নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ১,৪৫০ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: তিব্বতের মানসসরোবর লেকের নিকট থেকে।
  • পতনস্থল: পাকিস্তানে সিন্ধু নদীর সঙ্গে মিলিত হয়।
  • বিশেষত্ব: এটি পাঞ্জাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী এবং ইন্দো-পাকিস্তান পানি চুক্তির অধীনে ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১৪. চেনাব নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ১,২৪০ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: হিমাচল প্রদেশের বারালাচা পাস থেকে।
  • পতনস্থল: পাকিস্তানে সিন্ধু নদীর সঙ্গে মিশে যায়।
  • বিশেষত্ব: এটি পাঞ্জাব অঞ্চলে প্রচুর কৃষি জমিতে সেচের কাজ করে।

১৫. ঘাঘর নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ৪৬০ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: নেপালের শিবালিক পর্বতমালা থেকে।
  • পতনস্থল: গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়।
  • বিশেষত্ব: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমি নদী এবং প্রাচীনকালে সরস্বতী নদীর শাখা হিসেবে ধরা হয়।

১৬. সরযূ নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ৫০৭ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: উত্তরাখণ্ডের শিবালিক পর্বতমালা।
  • পতনস্থল: গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়।
  • বিশেষত্ব: এটি ভারতের প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থ রামায়ণের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং অযোধ্যা শহরটি এর তীরে অবস্থিত।

১৭. গান্ধক নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ৬৩২ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: নেপালের হিমালয় থেকে।
  • পতনস্থল: গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়।
  • বিশেষত্ব: এটি নেপাল ও ভারতের মধ্যে একটি প্রধান নদী, যা উত্তর বিহারের কৃষি এলাকায় পানি সরবরাহ করে।

১৮. সুবর্ণরেখা নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ৪৭৬ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: ঝাড়খণ্ডের রাঁচি অঞ্চলের পহাড়ি এলাকা থেকে।
  • পতনস্থল: বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
  • বিশেষত্ব: এটি ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং মূলত খনিজ অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যায়।

১৯. বেতুয়া নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ৫৭৫ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: মধ্যপ্রদেশের বিদিশা জেলা।
  • পতনস্থল: যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়।
  • বিশেষত্ব: এটি বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী, যা কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়।

২০. তুঙ্গভদ্রা নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ৫৩০ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: কর্ণাটকের পশ্চিমঘাট থেকে।
  • পতনস্থল: কৃষ্ণা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়।
  • বিশেষত্ব: তুঙ্গভদ্রা বাঁধ কৃষিক্ষেত্রে ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এটি দক্ষিণ ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২১. ধনসু নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ৭৩০ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: ছত্তিশগড়ের বস্তার জেলা।
  • পতনস্থল: গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়।
  • বিশেষত্ব: এটি ছত্তিশগড় ও ওডিশার মধ্যে প্রবাহিত হয় এবং খনিজ ও বনজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল।

২২. পেঙ্গাঙ্গা নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ৬৭৫ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: মহারাষ্ট্রের যবতমাল জেলা।
  • পতনস্থল: গোদাবরী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়।
  • বিশেষত্ব: এটি মহারাষ্ট্র ও তেলেঙ্গানার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

২৩. মনসা নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ৭২৭ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং অঞ্চলে।
  • পতনস্থল: ব্রহ্মপুত্র নদীর সঙ্গে মিশে যায়।
  • বিশেষত্ব: এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী।

২৪. পেন্নার নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ৫৯৭ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: কর্ণাটকের নন্দী পাহাড় থেকে।
  • পতনস্থল: বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
  • বিশেষত্ব: এটি অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটকের মধ্যে প্রধান নদী হিসেবে কাজ করে এবং কৃষিক্ষেত্রে পানির উৎস।

২৫. জহিলম নদী

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ৭২৫ কিলোমিটার
  • উৎসস্থল: জম্মু ও কাশ্মীরের ভেরিনাগ থেকে।
  • পতনস্থল: পাকিস্তানে সিন্ধু নদীর সঙ্গে মিশে যায়।
  • বিশেষত্ব: এটি কাশ্মীর উপত্যকার প্রধান নদী এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
Facebook
WhatsApp
Telegram

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Scroll to Top