ভারতের বিখ্যাত স্থাপত্যের তালিকা || স্থাপত্য, প্রতিষ্ঠাতা, অবস্থান, ও তৈরির সাল
প্রিয় বন্ধুরা :- আজকে তোমাদের ভারতের বিখ্যাত স্থাপত্যের তালিকার একটি পোস্ট শেয়ার করলাম। যেখানে ভারতের বিখ্যাত স্থাপত্য সমূহের নাম, সেগুলির প্রতিষ্ঠাতা, কোন রাজ্যে অবস্থিত এবং তৈরির সাল ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া আছে।
![ভারতের বিখ্যাত স্থাপত্যের তালিকা](https://prashnauttar.in/wp-content/uploads/2024/09/ভারতের-বিখ্যাত-স্থাপত্যের-তালিকা-1024x576.png)
ভারতের বিখ্যাত স্থাপত্যের তালিকা নিচে দেওয়া হলো, যেখানে স্থাপত্য, প্রতিষ্ঠাতা, অবস্থান এবং স্থাপত্য তৈরির সাল উল্লেখ করা হয়েছে:
১. তাজমহল
- অবস্থান: আগ্রা, উত্তরপ্রদেশ
- প্রতিষ্ঠাতা: মুঘল সম্রাট শাহজাহান
- তৈরির সাল: ১৬৩২-১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: শাহজাহান তাঁর স্ত্রী মুমতাজ মহলের স্মৃতিতে এই সৌধটি নির্মাণ করেছিলেন।
২. কুতুব মিনার
- অবস্থান: দিল্লি
- প্রতিষ্ঠাতা: কুতুব-উদ-দিন আইবক
- তৈরির সাল: ১১৯৯ খ্রিস্টাব্দে শুরু, ১৩৬৮ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ হয়
- বিবরণ: এটি বিশ্বের দীর্ঘতম ইটের মিনারগুলির মধ্যে একটি এবং দিল্লির সুলতানদের বিজয়ের স্মারক।
৩. লাল কিলা
- অবস্থান: দিল্লি
- প্রতিষ্ঠাতা: মুঘল সম্রাট শাহজাহান
- তৈরির সাল: ১৬৩৮-১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: দিল্লির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান, যা মুঘল সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় দুর্গ ছিল।
৪. বৃহদেশ্বর মন্দির
- অবস্থান: তাঞ্জাভুর, তামিলনাড়ু
- প্রতিষ্ঠাতা: রাজা চোল I
- তৈরির সাল: ১০১০ খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: এটি চোল রাজবংশের শাসনামলে নির্মিত এবং ভারতীয় মন্দির স্থাপত্যের একটি অনন্য নিদর্শন।
৫. হাওয়া মহল
- অবস্থান: জয়পুর, রাজস্থান
- প্রতিষ্ঠাতা: মহারাজা সাওয়াই প্রতাপ সিং
- তৈরির সাল: ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: এই পাঁচতলা ভবনটি বিখ্যাত তার ৯৫৩টি জানালার জন্য, যা ‘হাওয়া’ চলাচলের জন্য নকশা করা হয়েছে।
৬. ভারতীয় সংসদ ভবন
- অবস্থান: নতুন দিল্লি
- প্রতিষ্ঠাতা: ব্রিটিশ স্থপতি এডউইন লুটিয়েন্স এবং হার্বার্ট বেকার
- তৈরির সাল: ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ সম্পন্ন হয়
- বিবরণ: ভারতের সাংবিধানিক কেন্দ্র, যা গোলাকার স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত।
৭. গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া
- অবস্থান: মুম্বাই, মহারাষ্ট্র
- প্রতিষ্ঠাতা: ব্রিটিশ শাসন
- তৈরির সাল: ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: ব্রিটিশ রাজত্বের শেষ সময়কালে তৈরি এই স্মৃতিস্তম্ভটি মুম্বাইয়ের অন্যতম পরিচিত প্রতীক।
৮. সাঁচি স্তূপ
- অবস্থান: সাঁচি, মধ্যপ্রদেশ
- প্রতিষ্ঠাতা: সম্রাট অশোক
- তৈরির সাল: ৩য় শতাব্দী খ্রিস্টপূর্ব
- বিবরণ: এটি বৌদ্ধ স্থাপত্যের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ এবং বৌদ্ধ ধর্মের স্মৃতিস্তম্ভ।
৯. ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
- অবস্থান: কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ
- প্রতিষ্ঠাতা: ব্রিটিশ সরকার (লর্ড কার্জন)
- তৈরির সাল: ১৯০৬-১৯২১ খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: ব্রিটিশ স্থাপত্যের নিদর্শন, যা রানী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিতে নির্মিত।
১০. চারমিনার
- অবস্থান: হায়দ্রাবাদ, তেলেঙ্গানা
- প্রতিষ্ঠাতা: মুহাম্মদ কুলি কুতুব শাহ
- তৈরির সাল: ১৫৯১ খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: এটি হায়দ্রাবাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক এবং মুঘল স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন।
১১. মীনাক্ষী মন্দির
- অবস্থান: মাদুরাই, তামিলনাড়ু
- প্রতিষ্ঠাতা: প্রথম মুত্তু বিজয় রায় নায়ক (শুরু করেন), পরে বিভিন্ন রাজা দ্বারা সম্প্রসারিত (“পাণ্ড্য রাজবংশ”)
- তৈরির সাল: প্রাচীনতম অংশগুলি ৬ষ্ঠ শতাব্দী খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ শুরু হয়, তবে বর্তমান কাঠামোটি ১৬২৩-১৬৫৫ সালে গড়ে ওঠে।
- বিবরণ: এটি দক্ষিণ ভারতের অন্যতম বৃহৎ ও প্রাচীন হিন্দু মন্দির, যেখানে বিশাল গোপুরম (প্রবেশদ্বার টাওয়ার) রয়েছে।
১২. ভেম্বানদা মসজিদ (জামা মসজিদ)
- অবস্থান: দিল্লি
- প্রতিষ্ঠাতা: মুঘল সম্রাট শাহজাহান
- তৈরির সাল: ১৬৫০-১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: এটি ভারতের বৃহত্তম মসজিদ এবং দিল্লির অন্যতম প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন, যেখানে ২৫,০০০ মানুষ একসাথে নামাজ পড়তে পারে।
১৩. অজন্তা গুহা
- অবস্থান: মহারাষ্ট্র
- প্রতিষ্ঠাতা: সতাবাহন রাজবংশের শাসকেরা, পরে গুপ্ত রাজারা
- তৈরির সাল: ২য় শতাব্দী খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৫ম শতাব্দী খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত
- বিবরণ: অজন্তার গুহাগুলি বিখ্যাত তাদের প্রাচীন বৌদ্ধ চিত্রকলা এবং ভাস্কর্যের জন্য, যা বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক মূল্যবান অংশ।
১৪. কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান
- অবস্থান: অসম
- প্রতিষ্ঠাতা: অসমের বন বিভাগ (প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতির সৃষ্টি, তবে সরকার এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়)
- তৈরির সাল: ১৯০৮ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে স্বীকৃতি
- বিবরণ: কাজিরাঙা উদ্যানটি তার এক-শিং বিশিষ্ট গন্ডারের জন্য বিখ্যাত এবং ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে চিহ্নিত।
১৫. কনার্ক সূর্য মন্দির
- অবস্থান: কনার্ক, ওডিশা
- প্রতিষ্ঠাতা: গঙ্গ রাজবংশের রাজা নারসিংহ দেব I
- তৈরির সাল: ১২৫০ খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: সূর্য দেবতার জন্য নির্মিত এই মন্দিরটি বিশাল রথের আকারে তৈরি, যার ওপর সূর্যের সাতটি ঘোড়া টানা চাকার নকশা খোদাই করা আছে। এটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।
১৬. বাহাই উপাসনালয় (লোটাস টেম্পল)
- অবস্থান: দিল্লি
- প্রতিষ্ঠাতা: ফারিবুর্জ সাহবা (বাহাই ধর্মাবলম্বীদের উদ্যোগে)
- তৈরির সাল: ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: এই উপাসনালয়টি বিখ্যাত তার পদ্মাকৃতির নকশার জন্য এবং এখানে সকল ধর্মের মানুষ প্রার্থনা করতে পারে।
১৭. ভবনথানমের জয় স্তম্ভ (গোল ঘর)
- অবস্থান: পাটনা, বিহার
- প্রতিষ্ঠাতা: ক্যাপ্টেন জন গারস্টিন (ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি)
- তৈরির সাল: ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: গোল ঘরটি মূলত শস্যাগার হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল এবং এর আকৃতি ও স্থাপত্য ব্রিটিশদের শক্তিশালী স্থাপত্য দক্ষতা প্রদর্শন করে।
১৮. চান্দ বাউরি (বাউরি কূপ)
- অবস্থান: আবানারি, রাজস্থান
- প্রতিষ্ঠাতা: রাজা চন্দ্র (নিখিল দুনিয়ার)
- তৈরির সাল: ৯ম শতাব্দী খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: এটি বিশ্বের অন্যতম গভীর এবং বড় ধাপকূপ, যেখানে জল সংরক্ষণের জন্য অগণিত ধাপ রয়েছে।
১৯. গোলকুণ্ডা দুর্গ
- অবস্থান: হায়দ্রাবাদ, তেলেঙ্গানা
- প্রতিষ্ঠাতা: কাকাতিয়া রাজবংশের শাসকেরা
- তৈরির সাল: ১২শ শতাব্দী খ্রিস্টাব্দে নির্মিত, পরে কুতুব শাহী রাজারা এটিকে আরো বিস্তৃত করেন।
- বিবরণ: এই দুর্গটি তার সুরক্ষিত প্রাচীর ও আকর্ষণীয় স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত, এবং এটি হায়দ্রাবাদের প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী।
২০. হামপির ভিটা পাণ্ডব রথা
- অবস্থান: হামপি, কর্ণাটক
- প্রতিষ্ঠাতা: বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শাসকেরা
- তৈরির সাল: ১৪৪৬ খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: এটি একটি গ্রানাইট দ্বারা নির্মিত রথ, যা হামপি শহরের প্রাচীন হিন্দু মন্দির স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
২১. আম্বার কিলা
- অবস্থান: আম্বার, রাজস্থান
- প্রতিষ্ঠাতা: রাজা মান সিং I
- তৈরির সাল: ১৫৯২ খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: আম্বার কিলা রাজপুত স্থাপত্যের এক উৎকৃষ্ট নিদর্শন, যা লাল বেলে পাথর এবং মার্বেল দিয়ে তৈরি।
২২. মহাবলিপুরমের রথ মন্দির
- অবস্থান: মহাবলিপুরম, তামিলনাড়ু
- প্রতিষ্ঠাতা: পল্লব রাজবংশের রাজা নারসিংহবর্মণ I
- তৈরির সাল: ৭ম শতাব্দী
- বিবরণ: সমুদ্রের পাড়ে পাথরের খোদাই করা এই মন্দিরগুলি দ্রাবিড় স্থাপত্যের অন্যতম সেরা উদাহরণ।
২৩. গোল গুম্বাজ
- অবস্থান: বিজাপুর, কর্ণাটক
- প্রতিষ্ঠাতা: মুহাম্মদ আদিল শাহ
- তৈরির সাল: ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম্বুজ এবং বিখ্যাত এর ধ্বনিতরঙ্গ স্থাপত্যের জন্য।
২৪. গোলকুণ্ডা দুর্গ
- অবস্থান: হায়দ্রাবাদ, তেলেঙ্গানা
- প্রতিষ্ঠাতা: কাকাতীয় রাজবংশ, পরবর্তীতে কুতুব শাহী রাজবংশ দ্বারা সম্প্রসারিত
- তৈরির সাল: ১২০০-১৬০০ খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: এটি গোলকুণ্ডার বিখ্যাত দুর্গ এবং হায়দ্রাবাদের সমৃদ্ধ ইতিহাসের অন্যতম প্রতীক।
২৫. জামা মসজিদ
- অবস্থান: দিল্লি
- প্রতিষ্ঠাতা: মুঘল সম্রাট শাহজাহান
- তৈরির সাল: ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: এটি ভারতের বৃহত্তম মসজিদ এবং মুঘল স্থাপত্যের উজ্জ্বল নিদর্শন।
২৬. সিটি প্যালেস
- অবস্থান: উদয়পুর, রাজস্থান
- প্রতিষ্ঠাতা: মহারানা উদয় সিং II
- তৈরির সাল: ১৫৫৯ খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: প্যালেসটি উদয়পুরের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র এবং রাজপুত স্থাপত্যের শৈল্পিক সৌন্দর্য প্রদর্শন করে।
২৭. হুমায়ূনের সমাধি
- অবস্থান: দিল্লি
- প্রতিষ্ঠাতা: বেগম হামিদা বানু (হুমায়ূনের স্ত্রী)
- তৈরির সাল: ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দ
- বিবরণ: এটি ভারতের প্রথম উদ্যান সমাধি এবং তাজমহলের পূর্বসূরী বলে বিবেচিত হয়।
২৮. চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রামগিরি
- অবস্থান: বিহার
- প্রতিষ্ঠাতা: চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য
- তৈরির সাল: খ্রিস্টপূর্ব ৩২২-২৯৮ অব্দ
- বিবরণ: এটি প্রাচীন ভারতীয় রাজবংশের স্থাপত্য এবং সংস্কৃতির সাক্ষী।
Facebook
WhatsApp
Telegram