পলাশীর যুদ্ধর একটি সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ || পলাশী যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বর্ননা

পলাশীর যুদ্ধর একটি সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ || পলাশী যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বর্ননা

প্রিয় বন্ধুরা:- পলাশীর যুদ্ধর একটি সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ / পলাশী যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বর্ননা করা হলো। এখানে পলাশীর যুদ্ধ সম্পর্কে বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর আলোচনা করা হয়েছে । এই প্রশ্নোত্তর গুলো বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এসে থাকে, তাই আর দেরি না করে নিচের বিষয়বস্তু গুলো দেখা যাক।

পলাশীর যুদ্ধর একটি সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ পলাশী যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বর্ননা

প্রথম অধ্যায়: পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি

বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি:-

১৭৫৭ সালে, বাংলা ছিল ভারতের সবচেয়ে ধনী ও সমৃদ্ধ প্রদেশগুলির একটি। বাংলা, বিহার, এবং উড়িষ্যার শাসন তখন নবাব সিরাজউদ্দৌলার হাতে ছিল। তাঁর শাসনকাল ছিল অল্পদিনের, কিন্তু তিনি শক্তিশালী এবং কর্তৃত্বপরায়ণ শাসক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সম্পর্ক ততটা সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল না, বিশেষ করে তাঁর পূর্ববর্তী নবাব আলিবর্দি খানের মতো। নবাব আলিবর্দি খান কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে সচেষ্ট ছিলেন, কিন্তু সিরাজউদ্দৌলা তাঁর মতো ছিলেন না।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক ও সামরিক শক্তি:-

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তখন ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছিল। তারা শুধু বাণিজ্যিক ক্ষমতা নয়, সামরিক শক্তিরও মালিক হয়ে উঠেছিল। কোম্পানি বাংলা, বিহার, এবং উড়িষ্যার বাণিজ্যিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলা এই লক্ষ্য পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান। নবাবের সাথে কোম্পানির বিরোধ বাড়তে থাকে, বিশেষ করে তাদের কেল্লা নির্মাণ, শুল্ক প্রদান, এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক বিষয় নিয়ে।

দ্বিতীয় অধ্যায়: পলাশীর যুদ্ধের কারণসমূহ

১. নবাব সিরাজউদ্দৌলার নীতির বিরোধিতা:-

নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্রমবর্ধমান ক্ষমতাকে হুমকি হিসেবে দেখছিলেন। তিনি তাদের বাণিজ্যিক এবং সামরিক কার্যক্রম সীমিত করার চেষ্টা করেন, যা কোম্পানির জন্য একটি বড় প্রতিযোগিতা হয়ে দাঁড়ায়। কোম্পানির অধিকারকে সীমাবদ্ধ করার জন্য নবাব কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

২. কোম্পানির ষড়যন্ত্র ও মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা:-

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবের বিরোধিতার মোকাবিলায় ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়। তারা নবাবের অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ গ্রহণ করে এবং নবাবের প্রধান সেনাপতি মীরজাফরকে তাদের দলে টেনে নেয়। মীরজাফরকে বাংলার নবাব করার প্রলোভন দেখিয়ে কোম্পানি তাকে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় বিশ্বাসঘাতকতা করতে রাজি করায়।

৩. নবাবের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা:-

নবাবের শাসনকালে তাঁর অভ্যন্তরীণ প্রশাসনে বেশ কিছু দুর্বলতা ছিল। তাঁর সেনাবাহিনীর অনেকেই বিশ্বাসঘাতক এবং অসৎ ছিলেন। এর ফলে নবাবের শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কোম্পানির বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান দুর্বল হয়ে যায়।

তৃতীয় অধ্যায়: পলাশীর যুদ্ধ

যুদ্ধের প্রস্তুতি:-

পলাশীর যুদ্ধের প্রস্তুতির সময় নবাব এবং কোম্পানি উভয়ই কৌশলগত প্রস্তুতি নেয়। নবাব সিরাজউদ্দৌলার সেনাবাহিনী ছিল সংখ্যা ও শক্তিতে প্রভূত, কিন্তু তা সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ বিশ্বাসঘাতকতার কারণে এটি দুর্বল হয়ে পড়ে। মীরজাফর এবং তার সমর্থকরা নবাবের বিরুদ্ধে গোপনে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যান। অন্যদিকে, কোম্পানি রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে শক্তিশালী এবং পরিকল্পিত আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হয়।

যুদ্ধের ঘটনা:-

১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন, পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবাব সিরাজউদ্দৌলার সেনাবাহিনী ছিল প্রায় ৫০,০০০ জনের, আর কোম্পানির সৈন্যসংখ্যা ছিল প্রায় ৩,০০০ জন। যুদ্ধের সময় মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা প্রকাশ্যে আসে, এবং তিনি নবাবের পক্ষ থেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে নিজের বাহিনীকে নিরপেক্ষ রাখেন। এর ফলে নবাবের সৈন্যদল মনোবল হারায় এবং দ্রুত পরাজিত হয়।

চতুর্থ অধ্যায়: যুদ্ধের ফলাফল ও প্রভাব

পলাশীর যুদ্ধের পরিণতি:-

যুদ্ধের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলা পালিয়ে যান, কিন্তু পরবর্তীতে ধরা পড়েন এবং মীরজাফরের নির্দেশে হত্যা করা হয়। মীরজাফর বাংলার নবাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন, কিন্তু প্রকৃত ক্ষমতা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে চলে যায়। যুদ্ধের মাধ্যমে কোম্পানি বাংলার সম্পদ ও শাসন ব্যবস্থার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। এটি ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার সূচনা হিসেবে গণ্য হয়।

ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব:-

পলাশীর যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হতে থাকে। বাংলার সম্পদ ব্রিটিশ শাসনের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে এবং এর মাধ্যমে কোম্পানি পরবর্তীতে সমগ্র ভারতবর্ষে তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করে। পলাশীর যুদ্ধ শুধু একটি সামরিক পরাজয় নয়, বরং এটি ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁক পরিবর্তন ছিল।


পলাশীর যুদ্ধের কুড়িটি প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১: পলাশীর যুদ্ধ কোথায় সংঘটিত হয়েছিল?
উত্তর: পলাশীর যুদ্ধ বাংলা, নদিয়া জেলার পলাশী নামক স্থানে সংঘটিত হয়েছিল।

প্রশ্ন ২: পলাশীর যুদ্ধের তারিখ কী?
উত্তর: পলাশীর যুদ্ধ ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন সংঘটিত হয়।

প্রশ্ন ৩: নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রধান বিশ্বাসঘাতক কে ছিলেন?
উত্তর: নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রধান বিশ্বাসঘাতক ছিলেন মীরজাফর।

প্রশ্ন ৪: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে কে যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন?
উত্তর: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে রবার্ট ক্লাইভ পলাশীর যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।

প্রশ্ন ৫: পলাশীর যুদ্ধে নবাবের সেনাবাহিনীর সংখ্যা কত ছিল?
উত্তর: নবাবের সেনাবাহিনীর সংখ্যা প্রায় ৫০,০০০ জন ছিল।

প্রশ্ন ৬: পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল কী ছিল?
উত্তর: পলাশীর যুদ্ধের ফলস্বরূপ, নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন এবং মীরজাফর বাংলার নবাব হন। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।

প্রশ্ন ৭: মীরজাফর যুদ্ধের সময় কী ভূমিকা পালন করেন?
উত্তর: মীরজাফর যুদ্ধের সময় বিশ্বাসঘাতকতা করেন এবং নবাবের পক্ষ থেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে নিজের বাহিনীকে নিরপেক্ষ রাখেন।

প্রশ্ন ৮: পলাশীর যুদ্ধের প্রধান কারণ কী ছিল?
উত্তর: পলাশীর যুদ্ধের প্রধান কারণ ছিল নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক বিরোধ।

প্রশ্ন ৯: পলাশীর যুদ্ধের সময় নবাব সিরাজউদ্দৌলা কতদিন বাংলার নবাব ছিলেন?
উত্তর: নবাব সিরাজউদ্দৌলা প্রায় এক বছর বাংলার নবাব ছিলেন।

প্রশ্ন ১০: পলাশীর যুদ্ধের পরে বাংলার শাসন ব্যবস্থা কীভাবে পরিবর্তিত হয়?
উত্তর: পলাশীর যুদ্ধের পরে বাংলার শাসন ব্যবস্থা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এবং তারা মীরজাফরকে নবাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।

প্রশ্ন ১১: পলাশীর যুদ্ধের আগে নবাব সিরাজউদ্দৌলা কোন শহরে অবস্থান করছিলেন?
উত্তর: পলাশীর যুদ্ধের আগে নবাব সিরাজউদ্দৌলা মুর্শিদাবাদে অবস্থান করছিলেন।

প্রশ্ন ১২: পলাশীর যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মূল লক্ষ্য কী ছিল?
উত্তর: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মূল লক্ষ্য ছিল বাংলার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এবং তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা করা।

প্রশ্ন ১৩: পলাশীর যুদ্ধের পরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার কী পরিণতি হয়?
উত্তর: পলাশীর যুদ্ধের পরে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পালিয়ে যান, কিন্তু পরবর্তীতে ধরা পড়েন এবং মীরজাফরের নির্দেশে হত্যা করা হয়।

প্রশ্ন ১৪: পলাশীর যুদ্ধের সময় রবার্ট ক্লাইভের পদবি কী ছিল?
উত্তর: পলাশীর যুদ্ধের সময় রবার্ট ক্লাইভ ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লেফটেন্যান্ট কর্নেল।

প্রশ্ন ১৫: পলাশীর যুদ্ধ কোন নদীর তীরে সংঘটিত হয়?
উত্তর: পলাশীর যুদ্ধ ভাগীরথী নদীর তীরে সংঘটিত হয়।

প্রশ্ন ১৬: মীরজাফরের পর বাংলার নবাব কে হয়েছিলেন?
উত্তর: মীরজাফরের পর মীর কাসিম বাংলার নবাব হন।

প্রশ্ন ১৭: পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোন স্বার্থ প্রতিষ্ঠা পায়?
উত্তর: পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রশ্ন ১৮: নবাব সিরাজউদ্দৌলার সামরিক দুর্বলতার মূল কারণ কী ছিল?
উত্তর: নবাব সিরাজউদ্দৌলার সামরিক দুর্বলতার মূল কারণ ছিল তাঁর সেনাবাহিনীতে বিশ্বাসঘাতকতা ও দুর্বল নেতৃত্ব।

প্রশ্ন ১৯: পলাশীর যুদ্ধের পরে বাংলার অর্থনীতি কীভাবে পরিবর্তিত হয়?
উত্তর: পলাশীর যুদ্ধের পরে বাংলার অর্থনীতি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এবং বাংলার সম্পদ ইংল্যান্ডে প্রেরিত হতে শুরু করে, যা বাংলার অর্থনীতিতে গভীর সংকট সৃষ্টি করে।

প্রশ্ন ২০: পলাশীর যুদ্ধের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
উত্তর: পলাশীর যুদ্ধের ঐতিহাসিক গুরুত্ব হলো এটি ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের সূচনা করে এবং ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক পরিবর্তন হিসাবে বিবেচিত হয়।

Facebook
WhatsApp
Telegram

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Scroll to Top